কেন চেরি ফুল নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ফুটে যাচ্ছে?

চেরি ফুল বা চেরি ব্লসমের সাথে আমরা প্রায় সবাই কমবেশি পরিচিত। গোলাপি বা সাদা রঙের অপূর্ব সুন্দর এই ফুল পছন্দ করেনা এরকম মানুষ বিরল। প্রতি বছর মার্চের শেষে এবং এপ্রিলের শুরুতে এই ফুল ফোটে। চেরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসময় হাজার হাজার পর্যটক ছুটে যান জাপান, কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে। কিন্তু ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি দশকে ১.২ দিন এগিয়ে আসছে চেরি ব্লসম বা সাকুরার প্রথম পরিস্ফুটনের সময়!

চেরি ব্লসম গাছের যখন তিন-চতুর্থাংশ বা ৭০% ফুলই পরিস্ফুটিত হয় সেই সময়টি ‘পিক ব্লুম’ নামে পরিচিত। ১৯২০-১৯৩০ এবং ২০১০-২০২০ সালের পিক ব্লুমের সময় তুলনা করে দেখা যায়, কিয়োটোতে এই পিক ব্লুমের সময় এই এক শতক সময়ের ব্যবধানে এগিয়ে এসেছে প্রায় ১৩ দিন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে ৩ দিন।

বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০, ২০২১ এবং ২০২১ সালে, চেরি ফুল পরিস্ফুটনের তারিখ ছিল কিয়োটোর রেকর্ডে অন্য বছরের চেয়ে সবার আগে। এ বছর ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রত্যাশিত তারিখের এক সপ্তাহ পূর্বেই, ১৭ মার্চে চেরি ফুল প্রথম ফুটতে দেখা যায় যা সেখানকার রেকর্ডে ২য়।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানী প্যাট্রিক গোনজালেজের মতে ডিসিতে চেরি ব্লসমের যথাসময়ের পূর্বে পরিস্ফুটনের জন্য শুধুমাত্র মানবসৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। কিন্তু কিয়োটোর ১২০০ বছর পুরাতন চেরি ফুল সম্পর্কিত রেকর্ডের ভিত্তিতে করা গবেষণা অনুসারে কিয়োটোতে মানবসৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই ফুল ফোটার সময় এগিয়ে আসছে। অনুমান করা হচ্ছে চেরি ফুল পরিস্ফুটনের সময় আরও এক সপ্তাহ এগিয়ে আসবে ২১০০ সালের মধ্যে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বসন্তকালের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বসন্তকাল এগিয়ে আসছে। ফলে চেরি ব্লসম নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই পরিস্ফুটিত হচ্ছে। এভাবে পরিস্ফুটনের সময় এগিয়ে আসলে পরাগরেণু বাহকদের সাথে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়ে ফুলের পরাগায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

চেরি ব্লসম গাছ প্রায় এক মাস ধরে ৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় থাকা চেরি ফুল ফোটার জন্য অত্যাবশ্যক। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে শীতকালের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে চেরি ব্লসমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমনকি চেরি ফুলের পরিস্ফুটনও কমে যেতে পারে। চেরি ব্লসমের নির্ধারিত সময়ের আগেই ফুটে যাওয়া আমাদের জন্য সতর্কসংকেত।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধ করতে‌ পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের আরও সচেষ্ট হওয়া উচিত।

সংগৃহীতঃ


Team Science Bee.

Leave a Reply