ডুম স্ক্রলিং কি এবং এর থেকে বাঁচার উপায়।

 আমাদের জেনারেশনের প্রায় সকলেই ডুম স্কোলিং এর ভিকটিম।

একদম সহজ ভাষায় বলতে গেলে ডুম স্ক্রলিং হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রতিনিয়ত সোসাল মিডিয়া গুলো ননস্টপ স্ক্রলিং করা।

বিভিন্ন দেশের টপ ইঞ্জিনিয়াররা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত করতে যে আমরা যে  সোসাল মিডিয়া গুলো ব্যাবহার করে যাচ্ছি সেই সময়টা যাতে খুব সহজেই কাটিয়ে ফেলতে পারি এবং ওই হাজার হাজার কোটি টাকার কোম্পানি, যেগুলো আমাদের এটেনশন কেড়ে নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা কামাচ্ছে। ডুম স্ক্রলিং এর ভিকটিম আপনি শুধু একা নন। চারদিকে আপনার আমার মতো অনেকেই  এই সমস্যায় ভুগছে । তো চলুন জেনে নেই ডোম স্ক্রলিং থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি।   যে কোন বদ অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে যে অভ্যাস বা হ্যাবিট কিভাবে গঠন হয়?

“Power of Habit”-  “Atomic Habit” – এরকম  হ্যাবিট এর উপর যে বই আছে এই বই গুলোতে বিভিন্ন  ভাবে এই ফর্মুলাটি বার বার পাবলিশ হয়েছে যে,  হ্যাবিট বাঃ অভ্যাস এর ৪টি ধাপ থাকে। ধাপ গুলো হলোঃ  01. CUE.  02. Craving.  03. Response.  4. Reward.

০১। হ্যাবিট এর প্রথম ধাপ হচ্ছে CUE এটী হচ্ছে একটি সিগন্যালের মতো, যেটা আমাদেরকে হ্যাবিটটা শুরু করতে প্রাথমিক ভাবে সংকেত দেয়। যেমনঃ ফোনের নোটিফিকেশন বেজে উটা একটি সংকেত। নোটিফিকেশন আমাদের কে ফোনটি ধরতে বা ব্যাবহার করতে সিগন্যাল দেয়।

০২। দ্বিতিয় ধাপটি হচ্ছে Craving. CUE বা Signal পাওয়ার পরে আমাদের মাথায় একটী ক্রেভিং সৃস্টী হয়। ক্রেভিং টা হচ্ছে ফোন টা হাতে নিতে ইচ্ছা করা। আমরা যদি ফোনটি হাতে নিয়ে নোটিফিকেশনটি চেক করি তবেই আমাদের এই ক্রেভিংটি মিটে যাবে।

০৩।  তৃতীয় স্টেপ টি হচ্ছে Response. Response  টা হচ্ছে CUE বা সিগন্যাল পেয়ে ক্রেভিং সৃস্টি হওয়ার পরে কোন কিছুর জন্য একশন নেয়া। এটিই হচ্ছে ফোন টা হাতে নিয়ে নোটিফিকেশন টা চেক করা এবং ননস্টপ স্ক্রল করার একশন নেয়া।

০৪। চথুর্থ স্টেপ টী হচ্ছে Reward. Reward টা হচ্ছে কোন কাজ করার পরে পুরস্কার সরুপ কিছ একটা পাওয়া। আর এটাই হচ্ছে তৃতীয় ধাপ এ একশন নেয়ার পুরস্কার। অর্থাৎ মোবাইল হাতে নিয়ে ননস্টপ স্ক্রলিং করার পুরস্কার। আর এই স্ক্রলিং করার পুরস্কার হচ্ছে লাইক কমেন্ট শেয়ার অথবা আমাদের ভালো লাগে এমন কোন কনটেন্ট ।  যেমনঃ আমরা একটি পোস্ট করলে সাথে সাথেই লাইক কমেন্ট শেয়ার এর মতো রিওয়ার্ড গুলি পেতে থাকি যার ফলে আ্মাদের আনন্দ লাগতে শুরু করে এবং আমরা আগের মতো ননস্টপ স্ক্রলিং এর জন্য প্রস্তুত হয়ে যাই। এতক্ষন জানলাম আমাদের অভ্যাস বা হ্যাবিট গুলো কিভাবে গঠিত হয়।

এখন সোসাল মিডিয়া এডিকশন কমানোর জন্য এই  চারটি স্টেপ এ বাধা সৃস্টি করতে হবে  তাহলেই এই ভয়ানক ডোম স্ক্রলিং থেকে মুক্তি পেতে পারবো।

(Step 01) প্রধম ধাপ CEU তে কিভাবে আমরা বাধা সৃস্টি করতে পারি?

১। যে কোনো কাজ শুরু করার আগে আমরা ফোনকে নাগালের বাহির রাখতে পারি যতে CEU বা সিগন্যালটা না পাই।

২। ফোনের সব নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখতে পারি যাতে নোটিফিকেশন আসলে সিগনাল টা আর না পাই।

৩। CUE বন্ধ করার আরেকটা উপায় হচ্ছে আমাদের যখনোই বোড়িং লাগবে আমরা অন্য কোন একটা Hobby করবো। সেটা হতে বাহিরে থেকে ঘুরে আসা, বই পড়া ইত্যাদি আপনার পছন্দের কাজ।  বোরিং নেস কাটানোর জন্য আমাদের যে সোসাল মিডিয়াই ব্যাবহার করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

(Step 02) দ্বিতীয় ধাপ Craving এ কিভাবে আমরা বাধা সৃস্টি করতে পারি?

আমাদের বোরিং লাগলে, স্ট্রেস লাগলে  সোসাল মিডিয়া ব্যাবহার করে অই ফিলিংস গুলো দূর করার যে  ক্রেভিং বা আকাংখ্যাটা জাগে সেটি থামাতে আমারা আমাদের পছন্দের কিছু কাজ বা হবি দিয়ে অই আকাংখ্যাটা কে রিপ্লেস করে ফেলতে পারি। যেমন আমাদের সোসাল মিডিয়া ব্যাবহার করার ক্রেভিং হলে আমরা ফোন না ধরে হাতের কাছে থাকা বই নিয়ে পরা শুরু করতে পারি, আর এভাবেই সোসাল মিডিয়ার ক্রেভিংটাকে বই পড়ার হ্যাবিটে রিপ্লেস করে ফেলতে পারি। এজন্য হাতের কাছে কিছু  পছন্দের বই রাখা যেতে পারে যাতে করে অই ক্রেভিং টার বদলে বই পড়ার হ্যাবিট টা গড়ে উঠেতে থাকে এবং সোসাল মিডিয়ার ক্রেভিং টা রিপ্লেস হয়ে যায় বই পড়ার অভ্যাসে।

(Step 03)

কিউ বা সিগন্যাল পাওয়ার পরে আমাদের ক্রেভিং হয় এবং ক্রেভিং বাঃ আকাক্ষ্যা টা পূরন করতে আমরা Response করি মানে ফোন টা হাতে নিয়ে ননস্টপ স্ক্রলিং করি। এই ক্ষেত্রে আমারা অপ্রয়োজনীয় পেইজ এবং প্রফাইল গুলো আন ফলো করে দিতে পারি। তাহলে আমরা আপডেট কম পাবো এবং নিউজফিড শেষ হয়ে যাবে এবং সেখান থেকে বের হয়ে যেতে পারবো। এবং এপ্স এর সেটিংস এ গিয়ে রিমাইন্ডার দিইয়ে রাখবো যাতে আমাদের সেট করা টাইম লিমিট শেষ হলে আমাদের কে রিমাইন্ডার দেয় এবং আমরা এপ্স থেকে বের হয়ে যেতে পারি।

(Step 04)

একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কি? আমরা এইযে সারাদিন ননস্টপ স্ক্রোলিং করি এতে কিন্তু আমরা একটু ও বোরিং ফিল করিনা । এটা কেন হয়? এর মূল কারন হচ্ছে রিওয়ার্ড পাওয়া। কোন কিছু করার পরে আমরা যদি রিওয়ার্ড পাই তাহলে কাজটি আমাদের আবার করতেও ভালো লাগে বাঃ ইচ্ছে করে ঠিক এভাবেই আমরা সোসাল মিডিয়ায় রিস্পন্স করার সাথে সাথে রিওার্ড পাচ্ছি তাই এই স্ক্রল করার হেবিট টা চলতেই আছে। এই স্টেপ এ বাধা দেয়ার জন্য আমদের এমন একটি সিস্টেম ক্রিয়েট করতে হবে যাতে সোসাল মিডিয়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যাবহার করলে আমাদের অনেক খারাপ লাগা কাজ করে এবং আমরা যে রিওার্ড পাচ্ছি এই ফিলিংস টা যাতে না আসে।

১। আমরা আমাদের ফোনে ট্রাক করবো, যে কোন এপ্লিকেশন কতো টুকু সময় আমি ব্যায় করলাম এবং দিন শেষে নিজেকে প্রশ্ন করবো যে, এইযে ফেসবুকে আমি ১ ঘন্টা সময় কাটালাম এতে আমি নিজেকে নিয়ে খুশি নাকি? এভাবে প্রতিদিন আমরা যদি আমাদের সোসাল মিডীয়া ব্যাবহারের সময় ট্রাক করি এবং দেখি যে আমাদের দিনশেষে খারাপ লাগছে তাহলেই আমাদের এই হ্যাবিট থেকে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব।

২। প্রতিদিন ক্যালেন্ডারে আমরা একটি মার্ক করে রাখতে পারি যে, আমি কি আজকে আমার নির্ধারিত সময় এর থেকে কম সময় ফেইজ বুকে কাটিয়েছি কিনা? যদি কাটীয়ে থাকি তাহলে ক্যালেন্ডারে একটি মার্ক করে রাখা যেতে পারে।

৩। প্রতি সপ্তাহের একটি দিন সোসাল মিডিয়া থেকে পুরোপুরি বিরত থাকতে চেস্টা করা। এবং এভাবে করে সপ্তাহে ২ দিন এবং মাসে এক সপ্তাহ করে টাইম বাড়াতে চেস্টা করা। মূলত এটা করে আমাদের নিজেদের কে এই কাজটি করে প্রমান দিতে হবে যে আমি তো এতোক্ষন সোসাল মিডিয়া ইউজ করি নি কই আমার তো তেমন কিছুই হলোনা। এবং এভাবে আমাদের নিজেদের কে প্রমান দিতে পারলেই আমাদের জন্য সোসাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যাবহার বন্ধ করা সহজ হয়ে যাবে।

Leave a Reply