পরিক্ষার আগে রিভিশন দেয়ার কার্যকরী কৌশল।

রিভিশন দেয়া হয় না বলে আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাই, প্রায় সময়ই দেখা যায় আমরা পড়া ভুলে যাওয়া অর্থাৎ মনে রাখতে না পারার মতো সমস্যার সম্মুখীন হই। রিভিশন দেয়াটাকেও কিন্তু একটা শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে আমাদের রিভিশন দেয়াটা হয়ে উঠবে আরো অনেক বেশি কার্যকরী আর পরীক্ষার আগে পড়া ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোও আর আমাদের সাথে ঘটবে না। তো আর কথা না বাড়িয়ে চলো জেনে নেয়া যাক, রিভিশন দেয়ার বেশ কিছু কৌশল।

  • ফ্ল্যাশ কার্ড ব্যবহার করাঃ

ভোক্যাবুলারি আর সূত্র হলো এমন একেকটা জিনিস যেগুলো আমরা যতখানি সময় নিয়ে পড়ি বা শিখি ঠিক তার দ্বিগুণ গতিতে ভুলে যাই। এই সূত্র আর নতুন নতুন শব্দার্থগুলো মনে রাখার জন্য ব্যথাই সান্যিাশ কার্ড। সর্বসময় তো আর ভোক্যাবুলারি আর সূত্র লেখা বই সাথে নিয়ে ঘোরা সম্ভব সরসতাই এক্ষেত্রে তোমার সহায়ক হবে এই ফ্ল্যাশ কার্ড। ছোট ছোট এই কার্ডগুলোয় লিখে রাখো সূত্র, আর শব্দার্থ, আর সবসময় কার্ডগুলো নিজের সাথে রাখো যাতে করে যখন তখন রিভিশন দিতে পারো।

  • কেবল প্রয়োজনীয় অংশটুকুই চিহ্নিত করে রাখা :

বই দাগাতে জানাও একটা শিল্প। বই দাগাতে গিয়ে আমাদের কারো কারো বইয়ের অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাওয়া তো দূরের কথা নিচে দাগ পড়েনি এমন একটা লাইনও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। পুরো বইয়ের পৃষ্ঠার রংটাই বদলে যায়। সবগুলো লাইনই যদি দাগিয়ে ফেলো তাহলে পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশনটা দেবে কী করে? তাই, বই দাগিয়ে পড়ার সময় কেবল প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোই দাগ দিয়ে হাইলাইট করে রেখো। এতে রিভিশন দিতে সুবিধা হবে।

  • দক্ষতা ঝালাই হোক অনুশীলনে:

পড়া হলো, রিভিশনও দেয়া হলো। এবার পালা কতটা শেখা হলো সেটা যাচাইয়ের। মডেল টেস্ট আর কুইজ দেবার মাধ্যমে যাচাই করো তোমার প্রস্তুতি ঠিক কতটা। টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবে বিষয়ভিত্তিক অসংখ্য কুইজ, যেগুলো তোমাকে তোমার প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে অনেক সাহায্য করবে। এর চাইতেও বেশি উপকৃত হবে যদি পরীক্ষার আগে মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করতে পারো। কারণ, মডেল টেস্টগুলোতে আসল পরীক্ষার সময়কার অনুভূতিটা উপলব্ধি করা যায়। আর এতে করে পরীক্ষার সময়ের ভয়টাও কেটে যাবে অনেকাংশে।

  • পরীক্ষার খাতায় জ্ঞানের চেয়ে পারফরমেন্স জরুরি :

পরীক্ষাগুলোয় প্রায় সময়ই দেখা যায় বিগত বছরের প্রশ্নগুলো থেকে কিছু প্রশ্ন দিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও এমন কিছু বিশেষ টপিক থাকে যেগুলো থেকে কোনো না কোনো প্রশ্ন পরীক্ষায় চলেই আসে। বিশেষ কিছু গ্রাফ, চার্ট-এর মতো বিষয়বস্তুও পরীক্ষার প্রশ্নে একেবারে নিয়ম করে দেয়া হয়। এ ধরনের টপিকগুলো বেশ ভালো করে জানতে হবে। পরীক্ষার আগে রিভিশন দেয়ার সময়ও এ টপিকগুলোকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। একটা কথা মাথায় রাখা জরুরি। পরীক্ষার সময় তোমাকে কিন্তু তোমার বিস্তৃত মেধা আর জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে নম্বর দেয়া হবে না, তোমার খাতাতে তুমি ঠিক যতটুকু জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটাতে সমর্থ হবে সেটার ওপর ভিত্তি করে হবে তোমার মেধার মূল্যায়ন।

  • নোট খাতায় আর রিভিশন শিটে মিলবে স্বস্তি:

পড়ার সময় সাথে রেখো রিভিশন শিট। পড়ার সময় আমরা এমন অনেক কিছু তথ্যই পড়ে যাই যেগুলো তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিংবা যেসব তথ্য মনে রাখবারও তেমন প্রয়োজন নেই। রিভিশন শিট তোমাকে সাহায্য করবে এই প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় তথ্য আলাদা করতে। কিন্তু, কীভাবে? পড়ার সময় যে তথ্যগুলো মনে রাখা জরুরি, পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং একইসাথে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল সে তথ্যগুলোকেই আলাদা করে তুলে রেখো একটা রিভিশন শিটে, যাতে করে পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে পুরো বই রিভিশন দেয়ার দরকার না পড়ে। এক রিভিশন শিট দেখে ফেললেই পুরো টপিক আয়ত্তে চলে আসে। এতে রিভিশন দিতে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় অনেকটা কমবে। আর রিভিশনের গতিও বাড়বে। রিভিশন শিটের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক পৃথক পৃথক নোটখাতাও তৈরি করা যেতে পারে। এতে পরীক্ষার আগমুহূর্তে স্বল্প সময়ে প্রস্তুতি নেয়াটা আরো সহজ ও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।

  • এমন কিছু টপিক বারবার রিভিশন দাও, যা কমন পড়ে গেলে নিশ্চিত লিখবেই :

রিভিশন দেয়ার সময় এমন প্রশ্নের উত্তরগুলো বারবার দেখার চেষ্টা করো যে প্রশ্নগুলোর কোনোটা পরীক্ষায় চলে এলে তুমি লিখবেই লিখবে। ধরা যাক, বাংলার জন্যে বেশ কিছু কবিতার উক্তি ভালো করে শিখে রাখা যেতে পারে; যাতে করে ওই কবিতা থেকে প্রশ্ন করা হলে সেগুলো কাজে লাগানো যায়। কথায় বলে, ‘গাইতে গাইতে গায়েন’-ঠিক তেমনি বারবার রিভিশন দেয়ার অভ্যাস কোনো টপিকের ওপর তোমার দক্ষতা বাড়িয়ে দেবে বহুলাংশে। এই কৌশলগুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে গড়ে তোলো রিভিশন দেয়ার অভ্যাস আর তাহলেই পরীক্ষা সময় পড়া ভুলে যাওয়ার মতো বিড়ম্বনায় পড়ার সম্ভাবনা আর থাকবে না। পরীক্ষার আগের দিন নতুন কিছু শেখার চেয়ে বরং আগের পড়ে রাখা টপিকগুলো রিভিশন দেবে। একগাদা নতুন জিনিস পড়তে গেলে দেখবে যে, না আগের পুরোনো পড়াগুলো মনে আছে আর না নতুন যা শিখেছো সেটা মনে আছে। ব্যাপারটা অনেকটা আম আর ছালা দুটোই হারানোর মতো। আর হ্যাঁ, পারলে বন্ধুদের সাথে একসাথে রিভিশন দিও। যে যেই আঅংশে দক্ষ সেটা অনুযায়ী রিভিশন দিলে দেখবে পড়াটাও শেষ হয়ে যায় অনেক দ্রুত। 

সোর্সঃ স্টুডেন্ট হ্যাকস বই by আয়মান সাদিক & সাদমান সাদিক।

Leave a Reply