ন্যানো শব্দটি গ্রিক nanos শব্দ থেকে এসেছে যার অভিধানিক অর্থ হলো খাটো বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণী। কিন্তু এটি মাপের একক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফ্রান্স জাতীয় পরিষদ একক গুলোকে সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য কমিটি গঠন করে এবং তারাই প্রথম ডেসিম্যাল কিংবা দশ একক এর ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির প্রস্তাব করেন এবং দৈর্ঘ্যে একক মিটার এর সূচনা করেন। মিটার শব্দটি গ্রিক শব্দ metron থেকে এসেছে যার অর্থ হলো, পরিমাপ। এছাড়া মিটার এর ১০০ ভাগের এক ভাগকে সেন্টিমিটার বলা হয়। এই মিটার এর ১,০০০,০০০,০০০ (১০০ কোটি) ভাগের এক ভাগকে ন্যানোমিটার বলা হয় অর্থাৎ ১ ন্যানোমিটার =১০ মিটার যা মানুষের চুলের ব্যাসের ৮০,০০০ ভাগের একভাগ। যদি ইঞ্চির সাথে তুলনা করা হয় তাহলে ২৫,৪০০,০০০ ন্যানোমিটার= এক ইঞ্চি।
ন্যানোমিটার হলো পরিমাপের একক। ১ ন্যানোমিটার = ১০০ মিটার যা মানুষের চুলের ব্যাসের ৮০,০০০ ভাগের একভাগ। ন্যানোমিটার স্কেলে কোনো কিছু তৈরি করা এবং ব্যবহার করাকে ন্যানোটেকনোলজি বলে। এই আকৃতিতে কোনো কিছু তৈরি করা হলে তাকে সাধারণভাবে ন্যানো পর্টিক্যাল বলে। ন্যানোপ্রযুক্তি (ন্যানোটেকনোলজি বা সংক্ষেপে ন্যানোটেক) পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করার বিদ্যা। সুতরাং ন্যানো টেকনোলজি হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে ন্যানোমিটার স্কেলে একটি বস্তুকে নিপুণভাবে ব্যবহার করা যায় অর্থাৎ এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, ধ্বংস বা সৃষ্টি করা যায়। সাধারণত ন্যানোপ্রযুক্তি এমন সব কাঠামো নিয়ে কাজ করে যা অন্তত একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানোমিটার থেকে ছোট। ন্যানোপ্রযুক্তি বহুমাত্রিক, এর সীমানা প্রচলিত সেমিকন্ডাকটর পদার্থবিদ্যা থেকে অত্যাধুনিক আণবিক স্বয়ং-সংশ্লেষণ প্রযুক্তি পর্যন্ত; আণবিক প্রাণী)। কি কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ন্যানোপদার্থের উদ্ভাবন পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে ন্যানোটেকনোলজি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী নরিও তানিগুচি। ১৯৫৯ সালের ২৯ জানুয়ারি রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) সর্বপ্রথম ন্যানোপ্রযুক্তির ধারণা দেয়। একারণে রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের ৯ তারিখ ন্যানো টেকনোলজির জন্য একটা অন্যতম স্মরনীয় দিন হিসেবে বিবেচিত হবে। সেদিনই প্রথম অনুকে ইচ্ছেমতো সাজিয়ে পছন্দমতো কিছু একটা তৈরী করা সম্ভব হয়।
ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার
০১. যোগাযোগের ক্ষেত্রে: হালকা ওজনের ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বাহন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
০২. জ্বালানি ক্ষেত্রে: সস্তা ও উন্নত মানের সোলার এনার্জি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
০৩. সোলার সেল তৈরি: সিলিকন ন্যানোওয়্যার দ্বারা সোলার সেল তৈরি করা হয়।
০৪. রাসায়নিক শিল্পে: ইস্পাতের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী মেটাল তৈরি, টিটানিয়াম ডাই অক্সাইড তৈরির কাজে, বিভিন্ন বস্তুর ওপর প্রলেপ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
০৫. খেলাধুলা ও ক্রিয়া সরঞ্জাম তৈরিতে: ক্রিকেট ও টেনিস বলের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্য ও বাতাসে গলফ বলের পজিশন ঠিক রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
০৬. খাদ্য শিল্পঃ খাদ্যজাত দ্রব্যের প্যাকেজিং, ভিন্নধর্মী স্বাদ তৈরীতে ন্যানোম্যাটারিয়াল ব্যাবহ্রীত হয়।
০৭ .ইলেকট্রনিক্স শিল্পে: ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির ন্যূনতম বিদ্যুৎ খরচ, ওজন ও আকৃতি কমানো, কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। ন্যানো প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি ব্যাটারি, ফুয়েল ও সোলার সেল ইত্যাদির মাধ্যমে সৌরশক্তিকে অধিকতর কাজে লাগানো যায়। তাছাড়া ন্যানো ট্রানজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক্স জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিকশিত হচ্ছে।
০৮. ন্যানোচিপ ও মনিটর তৈরিতে: ভবিষ্যৎ কম্পিউটার চিপ তৈরি করার জন্য কার্বন ন্যানোটিউব ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হবে। এবং কার্বন ন্যানোটিউব দ্বারা প্যানেল মনিটর তৈরি হবে। এখন দেয়ালে ঝুলাবার জন্য ক্যালেন্ডারের মতো পাতলা টিভি বাজারে এসেছে যা তৈরি হয় ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
০৯. কম্পিউটিং-এর ক্ষেত্রে: প্রসেসর উন্নয়নে তথা এর গতিবৃদ্ধি, দীর্ঘ স্থায়িত্ব, কম শক্তি খরচ কম্পিউটারের মেমোরি গতি দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে যে কম্পিউটারকে ভাঁজ করে পকেটে রাখা যাবে এবং প্রয়োজনে আবার পকেট থেকে বের করে ভাঁজ খুলে কাজ করা যাবে।
১০. পরিবেশ সুরক্ষায়: বিভিন্ন মোটরযান ও শিল্পকারখানা হতে নির্গত কালো বিষাক্ত ধোঁয়া পরিশোধিত করে বর্জ্য উপাদানকে অপসারিত করে নির্মল বায়ুতে পরিনত করতে ন্যানোপার্টিক্যাল ব্যবহার করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানি থেকে বিভিন্ন বর্জ্য উপাদান এবং শিল্পবর্জ্য সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রেই ন্যানো টেকনোলোজির ব্যাবহার হয়ে থাকে।